শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্ব এবং কৃষকের কর্মসূচি ছাড়া ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে সমাজের মৌলিক কোনো পরিবর্তন হতে পারে না

শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্ব এবং কৃষকের কর্মসূচি ছাড়া ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে সমাজের মৌলিক কোনো পরিবর্তন হতে পারে না
আন্দোলন প্রতিবেদন
রবিবার, ১১ মে ২০২৫ | অনলাইন সংস্করণ
জুলাই অভ্যুত্থানের পর, সাধারণ ছাত্র-তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ছিল/আছে রাষ্ট্র-সমাজের একটা মৌলিক পরিবর্তন। কিন্তু ছাত্র-তরুণদের আন্দোলনে তেমন কোনো কর্মসূচি ছিল না। প্রথমে সেটি ছিল সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের একটি সংস্কারমূলক আন্দোলন। হাসিনা-আওয়ামী ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদ কর্মসূচিও তাদের ছিল না। রাষ্ট্র বা সমাজের মৌলিক পরিবর্তনের কর্মসূচি-তো দূরের কথা। বরং ছাত্র-তরুণদের গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল অংশটি (গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটসহ) যারা হাসিনা-আওয়ামী ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদের রাজনৈতিক আন্দোলন করে আসছিল তাদেরকে কোটা সংস্কারের আন্দোলন একটি ‘অরাজনৈতিক আন্দোলন’ বলে এই আন্দোলনের নেতৃত্বে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল।
তথাপি ছাত্র-তরুণদের আন্দোলনকে সমর্থন দেয় বিভিন্ন বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক, প্রগাতিশীল রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলো। তারা ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে হাসিনার পদত্যাগেরও দাবি তোলে। একই সাথে বুর্জোয়া-ক্ষুদেবুর্জোয়া এবং ধর্মবাদী দলসহ তাদের ছাত্রসংগঠনগুলোও এই আন্দোলনের সমর্থনে মাঠে নামে। ফলে আন্দোলনটি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
অভ্যুত্থানের পর ছাত্র-তরুণ নেতারা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা-সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি গণসরকার প্রতিষ্ঠার দাবি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। তারা সেনাবাহিনী, আমলা, এনজিও, ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের “তৃতীয় শক্তি”, সর্বোপরি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের পরামর্শে এবং বুর্জোয়া দলগুলোর সমর্থন নিয়ে সাম্রাজ্যবাদের অনুগত, এনজিও-কর্মকর্তা ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় বসায়। এভাবে সেনা সমর্থিত, সাম্রাজ্যবাদের অনুগত, ভারতের সাথে আপসকামী একই বুর্জোয়া শাসকশ্রেণির তৃতীয় শক্তির একটি ‘অন্তবর্তী সরকার’ গঠিত হয়। যার অংশীদার তারা নিজেরাও হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাসীন তৃতীয় শক্তির ‘অন্তবর্তী সরকার’ ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রযন্ত্রের মৌলিক কোনো পরিবর্তন করেনি। যেটুকু পরিবর্তন করেছে তা নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য। হাসিনা-আওয়ামী ফ্যাসিবাদের মূল উৎপাটনের কার্যকর, সামগ্রিক ও স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সাম্রাজ্যবাদ-ভারতের সাথে গণবিরোধী চুক্তি বাতিল করেনি, সেগুলো আন্দোলনকারী জনগণের সামনে প্রকাশও করেনি। বরং সাম্রাজ্যবাদী-সম্প্রসারণবাদীদের কাছেই ধর্ণা ধরছে, আপস করছে। দ্রব্যমূল্য দরিদ্র-মধ্যবিত্ত জনগণের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে, কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, ফরিয়া-মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম, মজুতদার-সিন্ডিকেট, ঘুষ-দুর্নীতি বহাল তবিয়তে রয়েছে। শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে, তাদের বকেয়া বেতন-বোনাস হাসিনা আমলের মতোই শ্রমভবন বা রাস্তা অবরোধ করে আদায় করতে হচ্ছে, তাদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের উপর হাসিনার আমলের মতোই দমন-নিপীড়ন, হত্যা-নির্যাতন চলছে। নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি, বরং ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বর্ধিত নিপীড়ন নারীদের উপর নেমে এসেছে। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ’৭১-এর খুনী রাজাকার জামাত সহ ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ও নব্য ফ্যাসিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। বরং অন্তর্বর্তী সরকার, ছাত্র-তরুণ নেতারা এবং বুর্জোয়া দলগুলো রাষ্ট্রের সংস্কার এবং বুর্জোয়া নির্বাচন নিয়ে (সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে), এমনকি আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন না নিষিদ্ধÑ ইত্যাদি প্রশ্নে কোন্দল/অন্তর্কলহে লিপ্ত হয়েছে। ছাত্র-তরুণ নেতারা ইতিমধ্যে সরকারে থেকে এবং সরকারের আনুকূল্যে বুর্জোয়া দল কিংস পার্টি গঠন করে বুর্জোয়া নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছে। তা হলে তাদের বিপ্লবটা কোথায়? তারা নতুন বন্দোবস্তের কথা বলছে অথচ সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ, দালাল শাসকশ্রেণির বিরোধী শ্রমিক-কৃষকের স্বার্থের কোনো কর্মসূচি তাদের নেই। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানকে তারা বিপ্লব, দ্বিতীয় স্বাধীনতা/প্রজাতন্ত্র বলে সোরগোল তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতার হালুয়া-রুটির ভাগ বসাতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
সংস্কার বিদ্যমান গণবিরোধী রাষ্ট্রব্যবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তনয় নয়, বরং মেরামত করা। ছাত্র-তরুণ নেতাদের জোর দাবি হচ্ছে এই বুর্জোয়া সংস্কারে। যা সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের দালাল বুর্জোয়া শাসকশ্রেণির রাষ্ট্র-ব্যবস্থাকে গোছগাছ করার চেষ্টা ছাড়া অন্য কিছু নয়। হাসিনা-আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্রীয় সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার বন্দোবস্ত করেছিল। যার অবসানেই সংস্কার সংস্কার বোল তোলা হচ্ছে যা বুর্জোয়া-সাম্রাজ্যবাদী সংস্কার পরিকল্পনা। এতে শ্রমিক-কৃষক সহ নিপীড়িত জনগণের কোনো স্থান নেই।
বিপ্লব বা সমাজের মৌলিক পরিবর্তনের বিজ্ঞান হচ্ছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ। মহামতি কার্ল মার্কস-এঙ্গেলস কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহারে দেখিয়েছেন বিপ্লব হলো– বুর্জোয়া সমাজের অগ্রসর শ্রেণি শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে বলপ্রয়োগে বুর্জোয়া শ্রেণিকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্রক্ষমতা শ্রমিকশ্রণির হাতে নেয়া। এবং সমাজতান্ত্রিক-কমিউনিজম সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে সমাজ থেকে সমস্ত শোষণ-নিপীড়ন উচ্ছেদ করে শ্রমিকশ্রেণি ও নিপীড়িত জনগণের মুক্তি ছিনিয়ে আনা। ২০-শতকে সে পথেই রাশিয়া ও চীনে বিপ্লবের মাধ্যমে মৌলিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছিল। সেখানে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে কৃষকদের সংগঠিত করে সকল সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, দালাল আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজিবাদ বলপ্রয়োগে উচ্ছেদ করে বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল, সমাজতন্ত্র-কমিউনিজমের পথে এগিয়েছিল (যদিও সে ব্যবস্থা এখন নেই)। মাও বলেছেন, বিপ্লব হচ্ছে একটি উগ্র বলপ্রয়োগের কাজ, যা দ্বারা নিপীড়িত শ্রেণি নিপীড়ক শ্রেণিকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করে। জুলাই অভ্যুত্থানে নিপীড়িত জনগণের একাংশ, শহুরে শ্রমজীবী তরুণ ও জঙ্গি ছাত্র-সমাজ, যে-ই মাত্র বলপ্রয়োগ শুরু করলেন, তাৎক্ষণিক শাসক বুর্জোয়া শ্রেণি প্রমাদ গুনলো, তড়িঘড়ি হাসিনাকে সরিয়ে নিজেদের শাসনকে আপাতত বিপদমুক্ত করলো, এবং ছাত্র-নেতৃত্বদের অসচেতন ও প্রতিক্রিয়াশীল/সুবিধাবাদী একাংশকে ক্ষমতার কিছু ভাগ দিয়ে আন্দোলনে পানি ঢেলে দিল। ফলে শাসক বুর্জোয়া শ্রেণি, রাষ্ট্রযন্ত্র বজায় থাকলো। এর পথ করলো ছাত্র-তরুণরাই। এটা হলো তাদের শ্রেণিগত সীমাবদ্ধতা ও অনিবার্য দুর্বলতা। যা কাটাতে পারে শুধু বিপ্লবী রাজনীতিতে সচেতন শ্রমিকশ্রেণি। সেরকম যাতে না ঘটতে পারে সেকারণেই ছাত্র-তরুণদের ভূমিকাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আকাশে তোলা হচ্ছে। প্রথমে তাদেরকে বিপ্লবী রাজনীতির মাঠ ও শিক্ষা থেকে সরিয়ে ট্রাফিক পুলিশ আর রাস্তা সাফ করার কাজে লাগানো হয়েছে। পরে তাদেরকে এক ভুয়া বিপ্লবের নামধারী নতুন নামের এক বুর্জোয়া পার্টির নিচে সমবেত করার চেষ্টা চলছে।
শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্ব এবং কৃষকের কর্মসূচি ছাড়া মধ্যবিত্তশ্রেণির ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে কোনো বিপ্লব সংঘটিত হতে পারে না। জুলাই অভ্যুত্থান সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
তাই বিপ্লব করতে হলে ছাত্র-তরুণদের বিপ্লবী আদর্শ ও কর্মসূচিতে সজ্জিত হতে হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্ব এবং কৃষকের কর্মসূচি ছাড়া ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে সমাজের মৌলিক কোনো পরিবর্তন হতে পারে না
জুলাই অভ্যুত্থানের পর, সাধারণ ছাত্র-তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ছিল/আছে রাষ্ট্র-সমাজের একটা মৌলিক পরিবর্তন। কিন্তু ছাত্র-তরুণদের আন্দোলনে তেমন কোনো কর্মসূচি ছিল না। প্রথমে সেটি ছিল সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের একটি সংস্কারমূলক আন্দোলন। হাসিনা-আওয়ামী ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদ কর্মসূচিও তাদের ছিল না। রাষ্ট্র বা সমাজের মৌলিক পরিবর্তনের কর্মসূচি-তো দূরের কথা। বরং ছাত্র-তরুণদের গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল অংশটি (গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটসহ) যারা হাসিনা-আওয়ামী ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদের রাজনৈতিক আন্দোলন করে আসছিল তাদেরকে কোটা সংস্কারের আন্দোলন একটি ‘অরাজনৈতিক আন্দোলন’ বলে এই আন্দোলনের নেতৃত্বে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল।
তথাপি ছাত্র-তরুণদের আন্দোলনকে সমর্থন দেয় বিভিন্ন বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক, প্রগাতিশীল রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলো। তারা ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে হাসিনার পদত্যাগেরও দাবি তোলে। একই সাথে বুর্জোয়া-ক্ষুদেবুর্জোয়া এবং ধর্মবাদী দলসহ তাদের ছাত্রসংগঠনগুলোও এই আন্দোলনের সমর্থনে মাঠে নামে। ফলে আন্দোলনটি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
অভ্যুত্থানের পর ছাত্র-তরুণ নেতারা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা-সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি গণসরকার প্রতিষ্ঠার দাবি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। তারা সেনাবাহিনী, আমলা, এনজিও, ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের “তৃতীয় শক্তি”, সর্বোপরি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের পরামর্শে এবং বুর্জোয়া দলগুলোর সমর্থন নিয়ে সাম্রাজ্যবাদের অনুগত, এনজিও-কর্মকর্তা ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় বসায়। এভাবে সেনা সমর্থিত, সাম্রাজ্যবাদের অনুগত, ভারতের সাথে আপসকামী একই বুর্জোয়া শাসকশ্রেণির তৃতীয় শক্তির একটি ‘অন্তবর্তী সরকার’ গঠিত হয়। যার অংশীদার তারা নিজেরাও হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাসীন তৃতীয় শক্তির ‘অন্তবর্তী সরকার’ ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রযন্ত্রের মৌলিক কোনো পরিবর্তন করেনি। যেটুকু পরিবর্তন করেছে তা নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য। হাসিনা-আওয়ামী ফ্যাসিবাদের মূল উৎপাটনের কার্যকর, সামগ্রিক ও স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সাম্রাজ্যবাদ-ভারতের সাথে গণবিরোধী চুক্তি বাতিল করেনি, সেগুলো আন্দোলনকারী জনগণের সামনে প্রকাশও করেনি। বরং সাম্রাজ্যবাদী-সম্প্রসারণবাদীদের কাছেই ধর্ণা ধরছে, আপস করছে। দ্রব্যমূল্য দরিদ্র-মধ্যবিত্ত জনগণের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে, কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, ফরিয়া-মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম, মজুতদার-সিন্ডিকেট, ঘুষ-দুর্নীতি বহাল তবিয়তে রয়েছে। শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে, তাদের বকেয়া বেতন-বোনাস হাসিনা আমলের মতোই শ্রমভবন বা রাস্তা অবরোধ করে আদায় করতে হচ্ছে, তাদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের উপর হাসিনার আমলের মতোই দমন-নিপীড়ন, হত্যা-নির্যাতন চলছে। নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি, বরং ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বর্ধিত নিপীড়ন নারীদের উপর নেমে এসেছে। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ’৭১-এর খুনী রাজাকার জামাত সহ ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ও নব্য ফ্যাসিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। বরং অন্তর্বর্তী সরকার, ছাত্র-তরুণ নেতারা এবং বুর্জোয়া দলগুলো রাষ্ট্রের সংস্কার এবং বুর্জোয়া নির্বাচন নিয়ে (সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে), এমনকি আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন না নিষিদ্ধÑ ইত্যাদি প্রশ্নে কোন্দল/অন্তর্কলহে লিপ্ত হয়েছে। ছাত্র-তরুণ নেতারা ইতিমধ্যে সরকারে থেকে এবং সরকারের আনুকূল্যে বুর্জোয়া দল কিংস পার্টি গঠন করে বুর্জোয়া নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছে। তা হলে তাদের বিপ্লবটা কোথায়? তারা নতুন বন্দোবস্তের কথা বলছে অথচ সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ, দালাল শাসকশ্রেণির বিরোধী শ্রমিক-কৃষকের স্বার্থের কোনো কর্মসূচি তাদের নেই। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানকে তারা বিপ্লব, দ্বিতীয় স্বাধীনতা/প্রজাতন্ত্র বলে সোরগোল তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতার হালুয়া-রুটির ভাগ বসাতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
সংস্কার বিদ্যমান গণবিরোধী রাষ্ট্রব্যবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তনয় নয়, বরং মেরামত করা। ছাত্র-তরুণ নেতাদের জোর দাবি হচ্ছে এই বুর্জোয়া সংস্কারে। যা সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের দালাল বুর্জোয়া শাসকশ্রেণির রাষ্ট্র-ব্যবস্থাকে গোছগাছ করার চেষ্টা ছাড়া অন্য কিছু নয়। হাসিনা-আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্রীয় সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার বন্দোবস্ত করেছিল। যার অবসানেই সংস্কার সংস্কার বোল তোলা হচ্ছে যা বুর্জোয়া-সাম্রাজ্যবাদী সংস্কার পরিকল্পনা। এতে শ্রমিক-কৃষক সহ নিপীড়িত জনগণের কোনো স্থান নেই।
বিপ্লব বা সমাজের মৌলিক পরিবর্তনের বিজ্ঞান হচ্ছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ। মহামতি কার্ল মার্কস-এঙ্গেলস কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহারে দেখিয়েছেন বিপ্লব হলো– বুর্জোয়া সমাজের অগ্রসর শ্রেণি শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে বলপ্রয়োগে বুর্জোয়া শ্রেণিকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্রক্ষমতা শ্রমিকশ্রণির হাতে নেয়া। এবং সমাজতান্ত্রিক-কমিউনিজম সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে সমাজ থেকে সমস্ত শোষণ-নিপীড়ন উচ্ছেদ করে শ্রমিকশ্রেণি ও নিপীড়িত জনগণের মুক্তি ছিনিয়ে আনা। ২০-শতকে সে পথেই রাশিয়া ও চীনে বিপ্লবের মাধ্যমে মৌলিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছিল। সেখানে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে কৃষকদের সংগঠিত করে সকল সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, দালাল আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজিবাদ বলপ্রয়োগে উচ্ছেদ করে বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল, সমাজতন্ত্র-কমিউনিজমের পথে এগিয়েছিল (যদিও সে ব্যবস্থা এখন নেই)। মাও বলেছেন, বিপ্লব হচ্ছে একটি উগ্র বলপ্রয়োগের কাজ, যা দ্বারা নিপীড়িত শ্রেণি নিপীড়ক শ্রেণিকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করে। জুলাই অভ্যুত্থানে নিপীড়িত জনগণের একাংশ, শহুরে শ্রমজীবী তরুণ ও জঙ্গি ছাত্র-সমাজ, যে-ই মাত্র বলপ্রয়োগ শুরু করলেন, তাৎক্ষণিক শাসক বুর্জোয়া শ্রেণি প্রমাদ গুনলো, তড়িঘড়ি হাসিনাকে সরিয়ে নিজেদের শাসনকে আপাতত বিপদমুক্ত করলো, এবং ছাত্র-নেতৃত্বদের অসচেতন ও প্রতিক্রিয়াশীল/সুবিধাবাদী একাংশকে ক্ষমতার কিছু ভাগ দিয়ে আন্দোলনে পানি ঢেলে দিল। ফলে শাসক বুর্জোয়া শ্রেণি, রাষ্ট্রযন্ত্র বজায় থাকলো। এর পথ করলো ছাত্র-তরুণরাই। এটা হলো তাদের শ্রেণিগত সীমাবদ্ধতা ও অনিবার্য দুর্বলতা। যা কাটাতে পারে শুধু বিপ্লবী রাজনীতিতে সচেতন শ্রমিকশ্রেণি। সেরকম যাতে না ঘটতে পারে সেকারণেই ছাত্র-তরুণদের ভূমিকাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আকাশে তোলা হচ্ছে। প্রথমে তাদেরকে বিপ্লবী রাজনীতির মাঠ ও শিক্ষা থেকে সরিয়ে ট্রাফিক পুলিশ আর রাস্তা সাফ করার কাজে লাগানো হয়েছে। পরে তাদেরকে এক ভুয়া বিপ্লবের নামধারী নতুন নামের এক বুর্জোয়া পার্টির নিচে সমবেত করার চেষ্টা চলছে।
শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্ব এবং কৃষকের কর্মসূচি ছাড়া মধ্যবিত্তশ্রেণির ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে কোনো বিপ্লব সংঘটিত হতে পারে না। জুলাই অভ্যুত্থান সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
তাই বিপ্লব করতে হলে ছাত্র-তরুণদের বিপ্লবী আদর্শ ও কর্মসূচিতে সজ্জিত হতে হবে।
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র